প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্ট টি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।অনেকেই আছেন যারা ইন্টারনেটে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি এবং টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে খুঁজে থাকেন, তাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি নিয়ে। এই পোস্ট টি পড়ে আরো জানতে পারবেন টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি, বাঙ্গির পুষ্টি উপাদান, বাঙ্গির জাত নির্বাচন, বাঙ্গি চাষের সময়, বাঙ্গি চাষের চারা রোপন, সার প্রয়োগ এবং রোগ ও পোকামাকড় দমন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিন, বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি, টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি, বাঙ্গি চাষের সময়, বাঙ্গি চাষের চারা রোপন, সার প্রয়োগ এবং রোগ ও পোকামাকড় দমন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি - টবে বাঙ্গি চাষ
- বাঙ্গির পুষ্টি উপাদান
- বাঙ্গির জাত নির্বাচন | বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
- বাঙ্গি চাষের সময় ও মাটি নির্বাচন
- বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
- টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
- শেষ কথাঃ বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি - টবে বাঙ্গি চাষ
বাঙ্গির পুষ্টি উপাদান
চলুন আমরা প্রথমে জেনে নেই বাঙ্গির পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।বাঙ্গি সাধারণত একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং গ্রীষ্মকালে এটি বাজারে পাওয়া যায়।আবার এটি গ্রীষ্মকালেই চাষ হয়ে থাকে। শরীর ঠাণ্ডা রাখতে তরমুজের পর বাঙ্গি দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে।বাঙ্গি এমন একটি ফল যা পুরোটাই জলীয় উপাদানে ভরপুর। এছাড়াও বাঙ্গি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, ভিটামিন বি৬, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি ফল। উপরিউক্ত উপাদানগুলো বাঙ্গির পুষ্টি উপাদান।
বাঙ্গির জাত নির্বাচন | বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
যে কোন ফল বা সবজি চাষ করার আগে জাত নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী।জাত সঠিক না হলে ভাল ফলাফল আশা করা যায় না।বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি জানার আগে চলুন কোন কোন জাতের বাঙ্গি আমাদের দেশে পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
আমাদের দেশে সাধারণত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়। একটি হল এঁটেল বাঙ্গি, অন্যটি হলো বেলে বাঙ্গি। এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে মিষ্টি। অন্যদিকে বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে কিছুটা বালু বালু লাগে। বেলে বাঙ্গি তুলনামূলকভাবে মিষ্টি কম হয়। উপরের দুটি জাত এর বাইরেও আরো এক ধরনের বাঙ্গি আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এ প্রজাতির বাঙ্গির নাম চিনাবাঙ্গি। অন্যান্য বাঙ্গি গুলো সাধারণত লম্বা ধরনের হয়ে থাকে তবে চিনাবাঙ্গি দেখতে গোল মিষ্টি কুমড়ার মত।
ছবিঃ বাঙ্গি।
বাঙ্গি চাষের সময় ও মাটি নির্বাচন
আমরা এখন জেনে নেব বাঙ্গি চাষের উপযুক্ত সময় কোনটি। বাঙ্গি সাধারণত একটি গ্রীষ্মকালীন ফল।তাই বাঙ্গি মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাস এর মধ্যে বীজ বপন করাই ভালো। গ্রীষ্মকালে এই ফলটি ভালো হয়। বর্ষার সময় গাছ রোপন করলে চারার ক্ষতি হয় তাই বর্ষায় চারা লাগানো উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
শুষ্ক ও উষ্ণ ধরনের জলবায়ু বাঙ্গি চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী আবহাওয়া। এছাড়াও বাঙ্গি চাষের জন্য মাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বাঙ্গি চাষের জন্য বেলে মাটি বা দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী তবে পলি মাটিতেও কেউ বাঙ্গি চাষ করা যায়।
বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
এখন আমরা বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি পুরোপুরি আলোচনা করব। বাঙ্গি চাষ করার জন্য প্রথমে চারা রোপণ করতে হবে। এরপর গাছে সার প্রয়োগ, পরিচর্যা, সেচ প্রয়োগ, পোকামাকড় দমন ইত্যাদি বিভিন্ন ধাপ সম্পন্ন করে বাঙ্গি চাষ করতে হয়। বাঙ্গি চাষ পদ্ধতির এই ধাপ গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
চারা রোপণঃ
চারা রোপন করার পূর্বে জমি চারা রোপণ উপযোগী করে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে প্রথমে মাটিকে আলগা করে দিতে হবে এরপর মই দিয়ে জমি তৈরি করে নিতে হবে। জমি তৈরি হয়ে গেলে এরপর গর্ত করে সেখানে কিছু সার যেমন পটাশ, ইউরিয়া ইত্যাদি দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপন করার জন্য সাধারণত 5 ফুট দূরত্ব করে করে বীজ বপন করতে হবে দূরত্ব কিছুটা কম বেশি হতে পারে। এবং চওড়া ১.৩৩ ফুট হবে। এবং গভীর করে একটি গর্ত তৈরি করতে হবে।
প্রতি গর্তে ৪ থেকে ৫ টি করে বীজ বুনতে হবে। চারা গজানোর পর ২ থেকে ৩ টি করে রেখে বাকি চারা গুলো তুলে ফেলতে হবে। বাঙ্গি গাছ এক ধরনের লতানো গাছ তাই গাছ বেশি ঘন ঘন রাখা উচিত না, যতটা সম্ভব পাতলা রাখতে হবে জমি। এ গাছ খুব কম সময় বাচে। একবার ফল ধরার দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত জমি থেকে বাঙ্গি বা খরবুজা তোলা যাবে।
আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার ২৫ উপকারিতা দেখে নিন।
সার ও সেচ প্রয়োগঃ
চারা রোপন করার পর চারার পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যা এর মধ্যে সঠিক পরিমাণে সার ও সেচ দিতে হবে। প্রতি শতাংশ জমিতে কি পরিমান সার দিতে হবে তার একটি হিসাব নিচে দেওয়া হল।প্রতি শতাংশ জমিতে গোবর সার দিতে হবে ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৩০০ গ্রাম এবং পটাশ ২০০ গ্রাম দিতে হবে । জমি তৈরির সময় জমিতে অর্ধেক সার দিয়ে দিতে হবে। আর বাকি অর্ধেক সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক জৈব সার ও পুরো টিএসপি সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। গাছ একটু বড় হলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার মাদার আশেপাশের মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে তারপর প্রয়োগ করতে হবে। সার দেওয়ার পর যদি মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে জমিতে সেচ দিতে হবে। বাঙ্গি গ্রীষ্মকালীন ফল হাওয়ায় বাঙ্গি গাছ তাপ ও ক্ষরা সহ্য করতে পারে।কিন্তু অপেক্ষাকৃত ভালো ফলন পেতে হলে শুকনা মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে এর ফলে পুরো গাছটি মারা যেতে পারে।
বাঙ্গির রোগ সমূহ এবং পোকামাকড় দমনঃ
গাছের সঠিক পরিচর্যা করার পরেও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এর আক্রমণে বাঙ্গি গাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা যায়। বাঙ্গি সবচেয়ে বেশি যে রোগে আক্রান্ত হয় সেটি হোয়াইট মোল্ড। ছত্রাকের আক্রমণে সাধারণত এই রোগটি হয়। এতে বাঙ্গির গায়ে সাদা তুলার মতো ছোপ ছোপ দাগ হয়। বাঙ্গি এই রোগটিতে আক্রান্ত হলে ফলটি পচে যায়। এর জন্য প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক একটি ঔষুধ আছে সেটি ব্যবহার করতে হবে। এটি পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর্যন্ত পরপর তিন বার বিকেলের শেষে দিকে গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে ঔষধটি স্প্রে করার পর ১৫দিন পর্যন্ত বাঙ্গি ফল বিক্রি করা যাবে না।
এছাড়াও বাঙ্গি কাঁঠাল পোকা নামক এক প্রকার পোকার দ্বারা আক্রমণ হয়। এই ধরনের পোকা বাঙ্গি গাছের পাতা খেয়ে ঝাঁজরা করে ফেলে। এর ফলে পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এই ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বাঙ্গি গাছের আশেপাশে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং গাছে পরিমাণ মতো ছাই ছিটাতে হবে।
এছাড়াও বাঙ্গি থ্রিপস পোকা, ব্লাক রট রোগ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। এসব পোকা ও রোগ থেকে বাঙ্গি গাছ কে বাঁচাতে আপনার নিকটস্থ কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
আমরা এখন জেনে নেব টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা গ্রামে থাকেন না শহরে থাকেন।জায়গার অভাবে তারা মাটিতে বাঙ্গি চাষ করতে পারেন না। তাই তাদের সুবিধার্থে টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি আলোচনা করব।
বাঙ্গি সাধারণত লতাপাতা টাইপের গাছ হয়ে থাকে।টবে বাঙ্গি চাষ করার জন্য প্রথমে একটি মাঝারি ধরনের পাত্র নিতে হবে।এরপর মাটি হিসেবে বেলে মাটি দোআঁশ মাটি দিয়ে টবটি ৩/৪ শতাংশ পরিপূর্ণ করতে হবে। এরপর সেই মাটির সাথে কিছু সার যেমন পটাশ, ইউরিয়া ইত্যাদি মিশিয়ে কয়েকদিন রেখে দিতে হবে। এরপর মাটি প্রস্তুত হলে সেখানে গর্ত করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের কয়েকদিন পর চারা হিসেবে ছোট ছোট গাছ বের হবে। সেসব গাছগুলো এক জায়গায় থাকলে তুলে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অন্তর রোপন করে দিব।
এরপর গাছটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সার এবং পানি দিয়ে গাছটি বড় করব।উপরে দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিমাণমতো সার ও পানি দিতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ আসলে তা নির্দিষ্ট ঔষধ এর মাধ্যমে দূর করতে হবে।
শেষ কথাঃ বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি - টবে বাঙ্গি চাষ
প্রিয় পাঠক আমরা এই পোষ্টের একদম শেষ দিকে চলে এসেছি। অনেকে আছেন বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি, টবে বাঙ্গি চাষ কিভাবে করবেন সেই সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই তাদের সুবিধার্থে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি, টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্বন্ধে। এছাড়াও এই পোস্টে আরো আলোচনা করেছি, বাঙ্গির জাত নির্বাচন, বাঙ্গি চাষের সময়, বাঙ্গি চাষের চারা রোপন, সার প্রয়োগ এবং রোগ ও পোকামাকড় দমন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে। যেন একজন কৃষক বা যিনি বাঙ্গি চাষ করতে চান তিনি একটি পোস্ট পড়ে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেয়ে যান।
আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
পোষ্ট টি আপনার কাছে উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধুবান্ধব আত্বীয় স্বজনদের সাথে যেন তারাও বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি এবং টবে বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন খুব সহজেই। ১৬৮২১