আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এই পোস্টে আমরা জেনে নেব আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর কথা যদি বলা হয় তাহলে এর অপকারিতা এর তুলনায় উপকারিতা অনেক বেশি।আমলকি প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নেই তাদের সুবিধার্থে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে পুরোপুরি আলোচনা করব এই পোস্টে।এছাড়াও আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম,আমলকির ভেষজ গুণ,আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন এই পোস্টটি পড়ে।

এই পোস্ট টি পড়ে আরো জানতে পারবেন আমলকির বৈশিষ্ট্য, আমলকিতে কি কি উপাদান আছে,আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, আমলকি কিভাবে খেতে হয়, আমলকি খেলে কি ক্ষতি হয়, আমলকির ক্ষতিকর দিক, আমলকি ব্যবহারের নিয়ম, আমলকির ভেষজ গুণ, আমলকি বেশি খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম

আমলকি এর ইংরেজি নাম Amla। আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica । আমলকি একটি টক ও ভিটামিন জাতীয় ফল।আমলকি ঔষধি ভেষজ ফল যা বিভিন্ন ধরনের রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

আমলকির বৈশিষ্ট্য

আমরা এখন জেনে নেব আমলকির বৈশিষ্ট্য গুলো। আমলকি মূলত সবুজ বর্ণের গোল গোল ধরনের একটি ফল । এটি একটি দেশীয় ফল তবে এটি ভেষজ একইসাথে ঔষধি একটি ফল। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার । এগুলোই আমলকির বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম। 

আমলকিতে কি কি উপাদান আছে

এখন আমরা দেখে নেবো আমলকিতে কি কি উপাদান আছে।আমলকীর ভেষজ ও ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক।আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।আমলকি ভিটামিন, খনিজ এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ একটি মূল্যবান ফল । আমাদের দেহে যে পরিমাণ ভিটামিন সি' প্রয়োজন প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করলে এই ভিটামিন সি এর অভাব খুব সহজেই মেটানো সম্ভব।

আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | আমলকি কিভাবে খেতে হয়

আমলকি মূলত ঔষধি ভেষজ জাতীয় ফল। আমরা এখন আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেব। আমলকি মূলত শীতকালে পাওয়া যায়। আমলকি খেতে টক ও তেতো হয় কিন্তু আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।আমলকি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। কেউ যদি আমলকী প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে খায় তা ওজন কমাতে সাহায্য করে এছাড়াও আমলকির রয়েছে বহু উপকারিতা। আমলকি শীতকালে হাঁপানি শ্বাসকষ্ট এর মত অসুখ থেকে মুক্তি দেয়। আমলকি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। নিচে আমলকি কিভাবে খেতে হয় তা দেওয়া হল। 

আরো পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার  ২০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

লবণ দিয়ে খাওয়াঃ আমরা পূর্বেই বলেছি আমলকি সাধারণত টকজাতীয় একটি ফল। তাই অনেকেই আছেন যারা টক খেতে পারেন না তারা আমলকির টক ভাব কমাতে এর সাথে কিছুটা লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে টক ভাব অনেকটাই কমে আসবে। আবার আমলকি কে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে লবণ ও মরিচ গুঁড়ো দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

চিবিয়ে খাওয়াঃ আমলকি খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো চিবিয়ে খাওয়া। আমলকি টি প্রথমে ধুয়ে নিয়ে তারপর কামড় দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে এতে করে আমলকির রস অনেকক্ষণ মুখে লেগে থাকে এবং এটি রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

জুস করে খাওয়াঃ অনেকেই টক এর কারনে আমলকি খেতে পারেন না। সেই জন্য কয়েকটি আমলকি কে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তা ছেঁকে নিয়ে এর সাথে অল্প করে পানি ও লবণ মিশিয়ে জুস করে খাওয়া যেতে পারে এতে করে টক ভাব কিছুটা কম হতে পারে।সকালে ২০-৩০ মিলিগ্রাম জুস এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

চাটনি বানিয়ে খাওয়াঃ অনেকেই আছেন চাটনি খেতে পছন্দ করেন আমলকি থেকে চাটনি বানানো যায়। তাই কেউ যদি চান আমলকির চাটনি বানিয়ে খেতে পারেন।

আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বুঝতে পেরেছেন আমলকি কিভাবে খেতে হয় সেই সম্পর্কে।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা এখন জেনে নেব আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এর কথা যদি বলা হয় তাহলে এর অপকারিতা এর তুলনায় উপকারিতা অনেক বেশি। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ নিয়মিত আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।আমরা প্রথমে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেব এরপর আমলকি খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করব।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আর ভিটামিন সি দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমলকির জুস খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
  • চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা অপরিসীম। বাজারে আমলকি বা আমলার তেল পাওয়া যায় যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। আমলা তেল ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয় একইসাথে মাথায় বিভিন্ন ধরনের খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। শুধু চুলের গোড়া মজবুত নয় একই সাথে চুলের বৃদ্ধিতে ও আমলকীর তেল উপকারী।
  • আমলকিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী বিভিন্ন গুণ। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে আমলকী খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। এছাড়াও আমলকি শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • আমলকীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম এর মত সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে।
  • আমলকী চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • চোখ এর জন্য আমলকি অনেক উপকারী। আমলকির রস মানুষের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একইসাথে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে।
  • আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার হজমে সাহায্য করে।
  • আমলকির রস শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। একই সাথে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আমলকি খুবই উপকারী।
  • আমলকি খাওয়া হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়ক, কারণ আমলকীর সেবন যেমন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, তেমনি আমলকিতে পাওয়া ভিটামিন-সি রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া রোধ করে, যা রক্তচাপকেও স্বাভাবিক রাখে।
  • আমলকি যেহেতু টকজাতীয় একটি ফল তাই এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • আমলকীর টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আমলকি খুবই উপকারী।আমলকির ব্যবহার মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক। আমলায় পাওয়া রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য মনকে তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে।

আমলকি খেলে কি ক্ষতি হয় | আমলকির ক্ষতিকর দিক | আমলকি খাওয়ার অপকারিতা

আমরা এখন জেনে নেব আমলকি খেলে কি ক্ষতি হয় বা আমলকির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের দেহের জন্য ভালো নয় তেমনি আমলকি আমলকির রস বেশি পরিমাণে আমাদের দেহের জন্য তেমন উপকার বয়ে আনবে না।আমরা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এরমধ্যে উপকারিতাগুলো উপরে উল্লেখ করেছি। আমলকির ক্ষতিকর দিক গুলো নিচে আলোচনা করা হল।  

আরো পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

  • কারো শরীরে যে কোন ধরনের সার্জারি থাকলে আমলকি খাওয়া যাবেনা। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • যে সকল নারীরা অন্তঃসত্ত্বা তাদের আমলকি না খাওয়াই ভালো। 
  • আমলকির ধাঁচ একটু ঠান্ডা হওয়ার ফলে এটি অতিরিক্ত খেলে সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার আমলকির তেল ঠান্ডা হয়ে থাকে তাই এটি ব্যবহার এর ফলে অনেক সময় ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
  • উচ্চ পরিমানে পটাশিয়াম থাকার ফলে যাদের কিডনি বা ডায়বেটিসের সমস্যা আছে তাদের সাবধানে এটি খাওয়া প্রয়োজন।
  • যারা বাচ্চাকে স্তন পান করায় তাদের আমলকি খাওয়া যাবেনা।

আমলকি ব্যবহারের নিয়ম

আমরা এখন জেনে নেব আমলকি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। আমলকি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে সাধারণত দুটি। প্রথমটি আমলকি কে ফল হিসেবে খাওয়া বা আমলকি ফলের জুস খাওয়া। দ্বিতীয় টি আমলকীর তেল ব্যবহার করা। আমলকীর তেল চুলের গোড়া মজবুত করে একই সাথে চুল বৃদ্ধিতে সহায়ক।

আমলকির ভেষজ গুণ

আমলকি একটি দেশীয় ফল একই সাথে আমলকীর ভেষজ ও ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক।ভেষজ শাস্ত্রে আমলকির মতো গুণ আছে এমন ফল বিরল। তাই এটাকে অনেকেই ফলের রাজাও বলে থাকেন।আমলকি দেখতে ছোট ও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।পুষ্টি বিজ্ঞানী ও ভেষজবিদদের গবেষণায় ১টি আমলকিতে ৩টি পেঁয়ারা ও ১০টি কাগজি লেবুর চেয়ে বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।১টি আমলকিতে ১৫ থেকে ২০টি কমলার চেয়ে বেশি গুণ, ১২০টি আপেলের চেয়ে বেশি গুণ বা ভিটামিন সি রয়েছে। প্রকৃতিক এ ফলের মধ্যে যেমনি রয়েছে ভিটামিন সি, তেমনি আমলকির ভেষজ গুণ অনেক বেশি।প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন অন্তত একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করা দরকার।

শেষ কথাঃ | আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক আমরা এই পোস্টের একদম শেষ দিকে চলে এসেছি। আজকের এই পোস্টে আমরা আমলকি সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় যেমন, আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, আমলকির বৈজ্ঞানিক নাম,আমলকির বৈশিষ্ট্য, আমলকিতে কি কি উপাদান আছে,আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, আমলকি কিভাবে খেতে হয়, আমলকি খেলে কি ক্ষতি হয়, আমলকির ক্ষতিকর দিক, আমলকি ব্যবহারের নিয়ম, আমলকির ভেষজ গুণ, আমলকি বেশি খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি যেন এই একটি পোষ্ট পড়ে আপনি আমলকি সম্পর্কে পুরো ধারণা পেয়ে যান।

আরো পড়ুনঃ কোন ভিটামিন কি কাজ করে জেনে নিন।

পোষ্ট টি আপনার উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের  সাথে নিচের শেয়ার বাটনগুলো তে ক্লিক করে।যেন তারাও আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন খুব সহজেই।১৬৮২১

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post